সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া পুরো রায়ের বিরেুদ্ধে রিভিউ করবে সরকার। এটি এ মাসেই (নভেম্বর) করা হবে। শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতাসংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের বিষয়ে আইনগত পরামর্শের জন্য বৈঠকে বসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। শনিবার বেলা ১২টার দিকে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তারা রিভিউয়ের আইনগত দিকে নিয়ে আলোচনা করেন।
দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলসহ রিভিউ আবেদন তৈরিতে সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে অংশ নেন।
৭৯৯ পৃষ্ঠার সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের বৃহৎ পরিসরে পর্যালোচনা ও রিভিউ করতে সহকর্মীদের নিয়ে ১১ সদস্যের কমিটি করে দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। কমিটির সদস্যরা গত ১৫ অক্টোবর থেকে প্রতি কার্যদিবসে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পর্যালোচনা থেকে রিভিউ আবেদন তৈরির কাজ করছেন।
উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে ওই রায়ে এ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ন্যস্ত করেছে আপিল বিভাগ।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ বিশেষত রায়ের পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের আবেদন জানাবেন বলে জানা গিয়েছিল। এখন পুরো রায়টিই বাতিল চাওয়া হবে বলে জানালেন আইনমন্ত্রী।
রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর গত ১১ অক্টোবর মাহবুবে আলম জানিয়েছিলেন, রায় হাতে আসার নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদনের নিয়ম। এ সময়ের মধ্যেই আবেদন জানানো হবে।
আর গত ২৩ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘রায়ে একজন ছাড়া সবাই (আপিল বিভাগের বিচারপতিরা) আলাদা আলাদা মত দিয়েছেন। কাজেই বৃহৎ পরিসরের রায় পর্যালোচনা করছি। নিজেদের ভেতরে আলাপ-আলোচনা করছি। পয়েন্টগুলো প্রস্তুত করছি। কাজ শেষ হলে রিভিউ আবেদন দায়েরের প্রস্তুতি নেবো।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন, ‘এ রায়ের বিষয়ে পড়া হচ্ছে। ভালোভাবে পড়ে, পরীক্ষা করে রিভিউ আবেদন জানানো হবে। এজন্য সময় লাগছে।’
গত ১ আগস্ট সকালে ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়।
গত ৩ জুলাই ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলও খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
ফলে মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়ে যায়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছিল।
এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজউদ্দিন ফকির ও মুরাদ রেজা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু, একরামুল হক টুটুল, সরদার রাশেদ, খন্দকার দিলিরুজ্জামান ও মাসুদ হাসান পরাগ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
**রাজনৈতিক, ধর্মবিদ্বেষী ও খারাপ কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন।**