আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দুর্নীতির অনুসন্ধান বন্ধে সুপ্রিমকোর্টের চিঠির বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের রায় মঙ্গলবার দেয়া হবে বলে জানা গেছে। সোমবার প্রকাশিত কার্যতালিকায় দেখা গেছে, রায়ের জন্য বিষয়টি মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে রাখা হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩১ অক্টোবর এ–সংক্রান্ত রুলের শুনানি শেষে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৩ দিনের মাথায় বিষয়টি রায় ঘোষণার জন্য এল।
আদালতে নিয়োজিত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ মঙ্গলবার রায়ের জন্য বিষয়টি তালিকায় থাকার কথা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সাবেক বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেয় দুদক। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে গত ২ মার্চ সুপ্রীমকোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। এর জবাবে গত ২৮ এপ্রিল আপীল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন হবে না বলে সুপ্রীমকোর্ট মনে করে।
এর আগে, আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে দুদককে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে সুপ্রীমকোর্ট থেকে চিঠি দেয়া হলেও অবসরে যাওয়া একজন জেলা জজের বিরুদ্ধে অভিযোগের নথিপত্র দুদকের প্রেরণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে। জানা গেছে, কুষ্টিয়ার সাবেক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ আফজাল হোসেনের (জেলা জজ) বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নথিজাতকরণের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের পরামর্শ চাইলে ওই বিচারকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ও প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনসহ সকল নথিপত্র দুদকে প্রেরণের পরামর্শ দেয় হাইকোর্ট বিভাগ।
গত বছরের ১৫ নবেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সহকারী রেজিস্ট্রার (বিচার) সোহাগ রঞ্জন পাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই পরামর্শের কথা জানানো হয়। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৩ থেকে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়। এর জবাবে গত ৪ এপ্রিল সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার (বিচার) মো’তাছিম বিল্যাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পুনর্বিবেচনার আবেদন নামঞ্জুর করে পূর্বে পাঠানো পরামর্শ বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণে আইন মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়া হয়।
এদিকে আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে আপীল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বিচারপতি জয়নুল আবেদীন দীর্ঘকাল বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি অনেক মামলার রায় প্রদান করেন। অনেক ফৌজদারি মামলায় তার প্রদত্ত রায়ে অনেক আসামির ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে।
মোঃ জয়নুল আবেদীন ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ২০০৯ সালের আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসরে যান তিনি।
সাবেক বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেয় দুদক। দুদকের দেয়া নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি জয়নুল আবেদীন ২০১০ সালের ২৫ জুলাই হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও করেছিলেন। রিটের ওপর শুনানি গ্রহণের পর বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দেন।
ওই সময় দুদকের আইনজীবী খুরশিত আলম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রিট খারিজের ফলে এখন দুদকের দেয়া নোটিসের ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে আর কোন আইনগত বাধা নেই। সম্পদ বিবরণী চেয়ে গত ১৮ জুলাই দুদক বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীনকে নোটিস দিয়েছিল বলে তিনি জানান।
রিট দায়েরকারীর আইনজীবী আহসানুল করিম ওই সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনাকে দুদক সম্পদের বিবরণী চেয়ে নোটিস দেয়। ওই নোটিস দেয়ার প্রক্রিয়া আইনানুগ হয়েছে বলে আপীল বিভাগের সিদ্ধান্ত রয়েছে। আপীল বিভাগের সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের জন্য মানা বাধ্যকর। এ যুক্তিতে আদালত রিটটি উপস্থাপন করা হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দেন।
**রাজনৈতিক, ধর্মবিদ্বেষী ও খারাপ কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন।**