ক্রিকেট পাড়ার দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। এই দু’দল যখন সাদা পোশাক গায়ে চাপিয়ে একে অন্যের প্রতিপক্ষ বনে যায়, তখন সেইটা ক্রিকেট ছাড়িয়ে আত্মমর্যাদার লড়াইতে রূপ নেয়। শুরু হয় সাদা পোশাকে রঙ্গিন গল্প। গল্পটা ক্রিকেটের, গল্পটা অ্যাশেজের।
তখন সময়টা ১৮৮২ সাল, সেদিন ওভাল টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে অস্ট্রেলিয়া। ৪র্থ ইনিংসে ফ্রেড স্পফোর্থের অবিস্মরণীয় নৈপুণ্যে ইংল্যান্ড মাত্র ৮৫ রানের জয়ের লক্ষ্যতেও পারেনি পৌঁছাতে। সে ম্যাচে স্পফোর্থ ৪৪ রান খরচায় নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। ফলে, ইংল্যান্ড তার নিজ ভূমিতে অনুষ্ঠিত সিরিজে ঐ মাঠে প্রথমবারের মতো ১–০ ব্যবধানে হেরে যায় অজিদের কাছে। সেই হার মানতে পারেনি ইংলিশরা।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে এমন হারের ফলে ম্যাচের পরদিন লন্ডনের প্রধান সংবাদপত্র দ্য স্পোর্টিং টাইমস্ তাদের প্রতিবেদনে ইংরেজ ক্রিকেট নিয়ে বিদ্রুপাত্মকভাবে বিখ্যাত উক্তি ছাপায়। যেখানে তারা উল্লেখ করে,
‘ইংলিশ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংলিশ ক্রিকেটকে ভস্মিভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে প্রদান করেছে।’
সেদিনের ওভাল টেস্ট হারের পর পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া সফর করে ইংল্যান্ড দল। সেই দলের নেতৃত্ব দেন ব্লাই, সেখানে তিনি অ্যাশেজ পুণরুদ্ধারের কথা জানান। সাধারণের মাঝেও এই সিরিজকে ঘিরে বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সেই সিরিজে অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্টে বিজয়ী হলেও ইংল্যান্ড পরবর্তী দুই টেস্টে জিতে নেয়। তৃতীয় ম্যাচটি ইংল্যান্ড ২–১ ব্যবধানে জয়ী হওয়ায় অ্যাশেজ বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাদেরকে।
চতুর্থ খেলায় একীভূত অস্ট্রেলীয় একাদশ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামে। দলটিকে পূর্বেকার তিন খেলায় অংশগ্রহণকারী মূল একাদশের চেয়েও অধিকতর শক্তিশালীরূপে বিবেচনা করা হয়েছিল দলটাকে। কিন্তু, এ খেলাটিকে সচরাচর ১৮৮২–৮৩ সিরিজের খেলা হিসেবে গণ্য করা হয় না। এটিকে টেস্ট হিসেবে গণ্য করা হলেও তা ছিল নামেমাত্র।
১৮৮২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দু‘দলে এই লড়াই চলছে ১২৫ বছর ধরে। এই ১২৫ বছর ধরে চলা অ্যাশেজে দুই দল নিজেদের মুখোমুখি হয়েছে ৩২৫ বার, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার ১৩০ জয়ের বিপরীতে হার ১০৬ ম্যাচে। ইংল্যান্ডের পরিসংখ্যান একদম উল্টো। ওদের জয় ১০৬ টাতে, হেরেছে ১৩০ ম্যাচ। ম্যাচ জয়ের মতোই দুই দলের সিরিজ জয়ের ফলাফলটাও একদম বিপরীত। ৬৮ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৩২ টাতে, পরাজয় ৩১ টা, ড্র ৫ ম্যাচ। আর ইংল্যান্ডের জয় ৩১ সিরিজ, হার ৩২ টাতে, ড্র ৫ টা।
প্রিয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের সবথেকে বড় জয় ১৯৩৮ সালে, ইনিংসের সাথে ৫৭৯ রানে। সবথেকে ক্লোজ করে থ্রি লায়ন্সরা ম্যাচ জিতেছিল ২০১৫ সালে মাত্র ২ রানে। এই ইংল্যান্ডের সাথেই অজিদের বড় জয়টা ১৯৪৬ সালে, ইনিংস এবং ৩৩২ রানে ওরা সবথেকে ক্লোজ করে ম্যাচ জেতেছিল ম্যানচেস্টার টেস্টে ১৯০২ সালে মাত্র ৩ রানে।
অ্যাশেজে দু‘দলের মুখোমুখিতে ৫০২৮ রান নিয়ে সব থেকে বেশি রান সংগ্রাহকের তালিতাকে সবার উপরে আছেন স্যার ডন ব্রাডম্যান। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান স্যার জ্যাক হোবস ৩৬৩৬ রান নিয়ে আছেন ব্রাডম্যানের ঠিক পরেই।
সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকার চূড়ার দিকে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ানদেরি বেশি আধিপত্য। ১৯৫ উইকেট নিয়ে অ্যাশেজের সেরা বোলারের মুকুট শেন ওয়ার্নের মাথায়। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়া জিম লেকার ১২৮ উইকেট নিয়ে আছে ৫ নাম্বার অবস্থানে।
**রাজনৈতিক, ধর্মবিদ্বেষী ও খারাপ কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন।**