আজ শুভ বড়দিন। খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের দিন। এই দিনে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টি-কর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার জন্য যিশু জন্ম নিয়েছিলেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটায় শুরু হয়েছে বড়দিন উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা।
এ উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশের গীর্জাগুলোকে সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে। বড়দিন উদযাপনে রাজধানীসহ দেশজুড়ে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিশ্বেরে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মানুসারীরাও আজ আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করছেন। আজ সরকারি ছুটির দিন। গত কয়েক দিন নগরের খ্রিস্টধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে তরুণ-তরুণীদের কীর্তনের দল ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়িয়েছে।
দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিস্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর বসবে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে বড়দিনকে বেছে নেন।
বড়দিন উদযাপনে প্রস্তুত দেশের খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীরা। দেশের সবচেয়ে বড় গীর্জা তেজগাঁও গীর্জার প্রস্তুতিও চূড়ান্ত। ভেতরে বাইরে সবখানেই চোখে পড়ে বর্ণিল সাজসজ্জার। রাত সাড়ে আটটায় বিশেষ প্রার্থনার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে বড়দিনের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
বর্ণিল উৎসব আর আনন্দের ছটা ছড়িয়ে পড়েছে কাকরাইলের গীর্জাতেও। সাজানো হয়েছে গোশালা-ক্রিসমাস ট্রি। ফুল আর রঙিন কাগজে নান্দনিক সাজে সেজেছে পবিত্র গীর্জা। রাত সাড়ে আটটায় আর্চ বিশপের প্রার্থনা পরিচালনার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে এই গীর্জায় বড়দিনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।
এবার বড়দিন উদযাপনে থাকছে বিজয়ের ছাপ। লাল-সবুজসহ বর্ণিল সাজ ও আলোকসজ্জায় সেজেছে রাজধানীর চার্চ ও পাঁচতারা হোটেলগুলো। সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি, ফুল, জরি, রঙ্গিন বাতি দিয়ে। বড়দিন উদযাপনে দিনজুড়ে থাকছে নানান আয়োজন।
এদিকে, বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। গীর্জাগুলোয় থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকস্তরের নিরাপত্তা বলয়।
কাকরাইল গির্জার ফাদার খোকন ভিনসেন্ট গমেজ বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও প্রার্থনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে বড়দিন। কয়েকশ’ মানুষ এই প্রার্থনায় অংশ নিয়েছে।
কাকরাইলের সেন্ট মেরীস ক্যাথেড্রাল চার্চ সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে আয়োজন। প্রথমে পাঠ করবেন ফিলিপ পালমা, তারপর পাঠ করবেন রেখা গোমেজ। এরপর সর্বজনীন প্রার্থনা পরিচালনা করবেন স্মৃতি রোজারিও।
কাকরাইল গির্জা ছাড়াও দেশের সব কয়টি গির্জায় এখন প্রস্তুত। এছাড়াও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরেও চলছে বিভিন্ন রকমের আয়োজন। ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করা, পিঠা-পায়েস বানানোসহ হরেক রকম মুখরোচক খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। আবহমানকাল ধরে এ দেশে সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্যকে আরো সুদৃঢ় করতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী এ পুণ্যদিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে ঔদার্য এবং মানবতার মহান ব্রতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণ ও উন্নয়নে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি আশা করেন, বড়দিন দেশের খ্রিষ্টা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিকে আরো সুদৃঢ় করবে।
বড়দিন উপলক্ষে বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও এবং মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল খ্রিষ্টা সম্প্রদায়ের লোকজনকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বড় দিন ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের জন্য আনন্দ বার্তা বয়ে আসুক এই কামনা করেছেন নেতৃদ্বয়।
বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন, বেসরকারি টিভি ও বেতার কেন্দ্রগুলো বড়দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায়ও এ দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ নিবন্ধ ছাপা হবে।
**রাজনৈতিক, ধর্মবিদ্বেষী ও খারাপ কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন।**