সবাইকে কাঁদিয়ে বুধবার পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে বিরল রোগ হেমানজিওমায় আক্রান্ত সাতক্ষীরার ছোট্ট শিশু মুক্তমণি। এরই মধ্যে গতকাল দুপুরে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। হাতের রক্তনালীতে টিউমারের কারণে অসীম কষ্ট পেয়ে মারা যাওয়া এই শিশুটির নাকি শেষ ইচ্ছা ছিল-তাকে যেন দাদার কবরের পাশে দাফন করা হয়। তাই মুক্তামণির চাওয়া অনুযায়ী দাদার কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়েছে।
গতকাল বাদ জোহর বাড়ির পাশেই মুক্তমণির জানাজা হয়। জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতশত মানুষ অংশ নেন।
জানা যায়, মুক্তামণি যখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন তখন তার দাদা মারা যান। মুক্তামণি তার দাদার খুব আদরের ছিল। সেও দাদাকে খুব ভালোবাসতো। চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফেরার পর মুক্তামণি মাঝে মাঝে দাদার কবর দেখতে চাইতো। তখন পরিবারের সদস্যরা হুইল চেয়ারে করে দাদার কবর দেখিয়ে আনতো। কয়েকদিন আগে থেকে মুক্তামণির অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সে বলতো- ‘আমি যদি মারা যাই, আমাকে যেন দাদার কবরের পাশে দাফন করা হয়।
মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম গাজী বলেন, মঙ্গলবার দুপুর থেকে খুব জ্বর এসেছিল মুক্তামণির। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে কথা বলি। তখন তিনি সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে ডাক্তার পাঠিয়ে দেন বাড়িতে। সদর হাসপাতালের ডাক্তার হাফিজুল্লাহ ও ফরহাদ আলম এসে জ্বরের চিকিৎসা করেন। তাৎক্ষণিক আমি ওষুধপত্র নিয়ে আসি। দুপুরে ও রাতে সেই ওষুধ খাওয়াই। রাতে একটা ছবেদা ফল খেয়েছিল মুক্তামণি। বুধবার সকালে কিছু খায়নি। আমার হাতের ওপর মারা যায় মেয়েটি।
মুদি দোকানদার ইব্রাহিম হোসেনের দুই যমজ মেয়ে হীরামণি ও মুক্তামণি। জন্মের দেড় বছর পর থেকে মুক্তামণির সমস্যা শুরু। প্রথমে হাতে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তা প্রচণ্ড ফুলে যায়। এতে মুক্তামণি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। চিকিৎসা চলে সাতক্ষীরা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায়। পরে গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর মুক্তামণিকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার পর তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ারও উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সেখানকার চিকিৎসকরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তামণির হাত দেখে চিকিৎসায় অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা দেশেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কয়েক দফা অপারেশনও করেন। তবে হাতের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি।
গত বছরের ১২ আগস্ট তার হাতে অস্ত্রোপচার হয়। তার ডান হাত থেকে প্রায় তিন কেজি ওজনের টিউমার অপসারণ করেন চিকিৎসকেরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়। তবে সাময়িকভাবে হাতের ফোলা কমলেও তা সম্প্রতি আগের চেয়েও বেশি ফুলে গিয়েছিল। রক্ত জমতে থাকে ফোলা জায়গায়। আর ড্রেসিং করতে কয়েক দিন দেরি হলেই হাত থেকে দুর্গন্ধ বের হতো। আগের মতো হাতটিতে পোকাও দেখা যায়।
**রাজনৈতিক, ধর্মবিদ্বেষী ও খারাপ কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন।**