ভারতের উত্তর প্রদেশের নয়ডাতে পার্কে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ হওয়ায় মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, শিবভক্ত কাওয়ারিয়াদের উপরে পুষ্পবৃষ্টি বর্ষণকারী পুলিশের নামাজে সমস্যা কেন?
আজ (বুধবার) গণমাধ্যমে প্রকাশ, আসাদউদ্দিন ওয়াইসি কটাক্ষ করে বলেছেন, উত্তর প্রদেশের পুলিশ কাওয়ারিয়াদের উপরে পুষ্পবৃষ্টি করেছিল। কিন্তু সপ্তাহে একবার নামাজ পড়লে ‘শান্তি ও সম্প্রতি’ নষ্ট হতে পারে! এর অর্থ আপনারা মুসলিমদের বলছেন, আপনারা যা-ই করুন না কেন, ভুলটি আপনাদেরই হবে!’
তাঁর প্রশ্ন, আইন অনুযায়ী এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত যে, কোনো কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেবে কোনো কর্মচারী তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে কী করবেন?
সম্প্রতি উত্তর প্রদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে নয়ডার সেক্টর-৫৮ এলাকায় এইচসিএলসহ ১২টি বহুজাতিক সংস্থাকে পার্কে নামাজ আদায় বন্ধ করতে নোটিস দেয়া হয়েছে। ওইসব সংস্থার মুসলিম কর্মীরা কয়েক বছর ধরে শুক্রবার পার্কটিতে জুমা নামাজ আদায় করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলোর কিছু মুসলিম কর্মীকে শুক্রবার পার্কে নামাজ পড়তে দেখা যায়। তাঁদের ওই কাজ করতে যেন নিষেধ করা হয়। অন্যথায় যদি পার্কে কর্মীদের নামাজ আদায় করতে দেখা যায়, তা হলে কোম্পানিগুলোকে নির্দেশভঙ্গের দায় নিতে হবে।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই বিতর্কিত নির্দেশিকা জারি করেছে। প্রকাশ্যে নামাজ আদায়ে এলাকায় ‘সম্প্রীতি বিঘ্নিত’ হচ্ছে বলে ওই সংগঠনটি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিল।
পুলিশের ওই নির্দেশিকা জারির পরে সংশ্লিষ্ট এলাকার মুসলিম কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছেন।
এরআগে গত এপ্রিলে বিজেপিশাসিত হরিয়ানায় ওয়াজিরাবাদ, আতুল কাটারিয়া চক, সাইবার পার্ক, বখতাওয়ার চক ও সাউথসিটিতে জুমা নামাজ পড়া ব্যাহত হয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের বাধার ফলে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ্গ দল, হিন্দু ক্রান্তি দল, গো-রক্ষক দল ও শিবসেনার সদস্যরা হরিয়ানার গুরুগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে জুমা নামাজ বন্ধ করার জন্য সেখানে গিয়ে, ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘রাধে রাধে’ বলে স্লোগান দেন।
হরিয়ানার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টার সেসময় কার্যত হিন্দুত্ববাদী সংগঠকদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, মসজিদ, ঈদগাহ’র মতো নির্দিষ্ট ধর্মীয়স্থানে নামাজ পড়া উচিত। যদি জায়গার অভাব হয়, তবে নিজের বাড়িতে নামাজ পড়ুন।
প্রসঙ্গত, উত্তর প্রদেশে কাওয়ার যাত্রার (শিবভক্তদের বার্ষিক তীর্থযাত্রা) সময় গত আগস্টে পুলিশের পক্ষ থেকে হেলিকপ্টার থেকে তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানাতে তাঁদের উপরে পুষ্পবৃষ্টি করা হয়েছিল। সড়ক পথে হাজার হাজার তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তায় সেসময় ৬০ টির বেশি ড্রোন ক্যামেরা, স্বেচ্ছাসেবক, জেলা পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল। শিবভক্তরা যেসব সড়ক দিয়ে হেঁটে যান সেইসব সড়কে সমস্ত গোশতের দোকানও বন্ধ করে দেয়া হয়।
হিন্দুদের ভগবান শিবের মাথায় পানি ঢালার জন্য কাওয়ার যাত্রা নামক তীর্থযাত্রার প্রচলন আছে বিহার এবং উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায়। শিবভক্তরা দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে শিবের মাথায় পানি ঢেলে পুণ্যলাভের চেষ্টা করেন।
উত্তর প্রদেশের সাবেক সপা সরকার কাওয়ার যাত্রার সময় মাইক, ডিজে ও মিউজিক সিস্টেম নিষিদ্ধ করলে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তা চালু করার নির্দেশ দেন। বিজেপি’র মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, এটা কাওয়ার যাত্রা, না শবযাত্রা? কাওয়ার যাত্রায় বাজনা বাজবে না, ডমরু বাজবে না, ঢোল বাজবে না, চিমটে বাজবে না, লোকজন নাচবে না, গাইবে না, তাহলে কাওয়ার যাত্রা কীভাবে হবে?’
**রাজনৈতিক, ধর্মবিদ্বেষী ও খারাপ কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন।**